‘ডন কো পাকাড়না মুশকিল হি নেহি, নামুমকিন হ্যায়- একটি ২৭ বছরের ক্যারিয়ারের গল্প

একজন শাহরুখ খান নিজের নামে বাইরেও বলিউডে নিজেদের আলাদা পরিচয় গড়ে নিয়েছেন, দর্শকের চোখে তিনি কিং খান, বলিউড বাদশা। সিনেমা পাড়ায় তিনি হলেন ডন। আবার কারো কাছে কিং অব রোমান্স! এমন অনেক আলাদা আলাদা বিশেষণ জুড়ে গেছে তার নামের পাশে। কিং খান গত ২৫ শে জুন বলিউড সিনেমা পাড়ায় ২৭ টি বছর পার করে দিয়েছেন!দীর্ঘ এই পথচলায় প্রথম থেকেই তিনি সফলতা মুখ দেখে চলেছেন যদিও এজন্য তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

১৯৬৫ সালের ২ ই নভেম্বর নয়াদিল্লি জন্ম গ্রহণে করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই অমিতাভ বচ্চন, দীলিপ কুমার এর অভিনয় তাকে বিনোদন জগৎ আকৃষ্ট করতে থাকে। ১৯৮৮ দিল্লি হংসরাজ কলেজ থেকে ইকোনমিকসে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনের পর পরই তিনি দিল্লিতে থিয়েটার এ্যাকশন গ্রুপে যোগ দিলে ওখানেই তার অভিনয়ের হাতেখড়ি হয়। তারপর ১৯৮৯ সালে টিভি সিরিয়াল ‘ফৌজি’ এর মাধ্যমে টেলিভিশন জগৎ তার অবির্ভাব ঘটে।

পরে আরো বেশ কিছু সিরিয়ালে কাজ করেন। নিজেকে সবসময় সেলুলয়েড এর পর্দায় দেখতে চেয়েছেন তিনি এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউড পা রাখেন তিনি। প্রথম সিনেমাতেই বক্সঅফিস মাত করে এই বছরই ফিল্মফেয়ার এর নবাগত অভিনেতার পুরষ্কার জিতে নেন।


এরপর তিনি একে একে অভিনয় করেছেন, আনজাম, কুছ কুছ হোতা হ্যায়, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে, দিল তো পাগল হ্যায়, দেবদাস, স্বদেশ, ডন, কাভি খুশি কাভি গাম, চাক দে ইন্ডিয়া, মাই নেম ইজ খান, হ্যাপি নিউ ইয়ার ও দিলওয়ালে’র মতো ব্লকবাস্টার ছবিগুলোতে।


শাহরুখ খান ১৪ বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড অর্জনের পাশাপাশি ২০০২ সালে সিনেমায় অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত করেন। এছাড়াও স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিনয় জগৎ অবদানের জন্য তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করা হয়। একজন শাহরুখ খান কোটি ভক্তের প্রিয় কিং খান, বলিউড বাদশা তিনি দুইদশক ধরে টানা ব্লকবাস্টার মুভি উপহার দিয়ে যাচ্ছেন দর্শকদের।


রোমান্টিক সিনে তার সাবলীল ও স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় বরাবরই ভক্তদের হৃদয় ছুয়ে গেছে। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জাইঙ্গে’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যা’ ও ডিল তো পাগল হ্যায়’, মুভি গুলোর রোমান্টিসিজমে হাজারো ভক্ত নিজের অজান্তেই হারিয়েছেন নিজেকে সাথে সাথে প্রিয় মানুষটিকে স্বীয় ভালোবাসা প্রকাশ করার অনুপ্রেরণা খোজে নিয়েছে।

তার জনপ্রিয় সিনেমা গুলোতে অনেক সংলাপ ভক্তদের মুখে মুখে সেগুলো মাঝে রয়েছে, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে: শাহরুখ- কাজল জুটির সাড়াজাগানো এ সিনেমায় রাজ চরিত্রে শাহরুখের দেওয়া সংলাপ- ‘বাড়ে বাড়ে দেশোঁমে অ্যায়সা ছোটে ছোটে বাত হোতে র‌্যাহতে হ্যায় সেনোরিটা’ হয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়।

কুছ কুছ হোতা হ্যায়: শাহরুখ-কাজল ও রানি মুখার্জী অভিনীত জনপ্রিয় এ সিনেমার সংলাপ- ‘প্যায়ার দোস্তি হ্যায়। আগর ও মেরি সবসে আচ্ছা দোস্ত নেহি বান সকতি তো ম্যায় ইসকোভি প্যায়ার কর নেহি সাকতা। কিঁউকি দোস্তি বিনা তো প্যায়ার হোতা হি নেহি’এখনো দর্শকের হৃদয়ে গেধে আছে।

দেবদাস: শাহরুখ-ঐশ্বরিয়া অভিনীত সঞ্জয় লীলা বনসালির ‘দেবদাস’-এই সিনেমা ও রয়েছে একটি জনপ্রিয় সংলাপ – ‘বাবুজি নে কাহা গাঁও ছোড় দো, সব নে কাহা পারো কো ছোড় দো,পারো নে কাহা শরাব ছোড় দো, আজ তুমনে ক্যাহ দিয়া হাভেলি ছোড় দো, এক দিন আয়েগা যব ওহ ক্যাহেঙ্গে, দুনিয়া হি ছোড় দো।

ডন: এই সিনেমা জনপ্রিয় সংলাপটির সবচেয়ে জনপ্রিয়, ‘ডন কো পাকার না মুশকিল ই নেহি নাহ মুমকিন হ্যা’। এসব জনপ্রিয় সংলাপ গুলোই মনে করিয়ে দেয় ভক্তদের কত কাছে তিনি পৌছেন। সংলাপ গুলো আজও ভক্তদের মুখে মুখে ফিরে।


এই দীর্ঘ সাতাশ বছরের অনেক চরায় উতরাই পের হতে হয়েছে কিং খানকে। তিনি জীবনে সবচেয়ে কষ্ট পান যখন তার বাবা ক্যানসারে রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। শাহরুখকে অনেকেই মনে করেন অহংকারী একগুঁয়ে। তবে তিনি যে তা নন তা বোঝাতে একবার বলেছিলেন, ‘মানুষ ভাবে আমি একগুঁয়ে। কিন্তু আমি তা নই। আমি শুধু হারতে চাইনা। কারণ আমার বাবা ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে সফল ব্যর্থ মানুষ। আমি তার মতো হয়ে থাকতে চাইনা’। বর্তমান সময়ে শাহরুখের কিছু মুভি বক্সঅফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে তাকে সমালোচকদের রোষানলে পড়তেও দেরি হয়নি।

কিন্তু বলিউড বাদশা বক্সঅফিস মাতানোর মন্ত্র ভালো করে জানেন। তার ব্লকবাস্টার ট্যাপিক্যাল সিনেমাগুলোর জন্য সিনেমাপ্রেমীরা মুখিয়ে আছে। তার নতুন সিনেমাগুলো হয়ত অতিশীগ্রই আবারও বক্স অফিস কাপাতে শুরু করবে এটা আগে থেকেই আঁচ করা যায়। সেই সাথে এটাও বলে দেয়া যায় সামনের দিন গুলোতে তার ভক্তের পরিসর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌছে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

লিখেছেন ঃ তোফায়েল পাঠান শান্ত

Previous articleআবুল মনসুরের ‘আয়না’য় সমাজের প্রতিচ্ছবি
Next articleপ্রথম গল্পটি তিনি লিখেছিলেন বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে
নতুন দিনের শপথে আমরা নির্ভীক